হুরহুরে ফুল হচ্ছে Cleomaceae পরিবারের Cleome গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের নাম। এটি মাকড়সা ফুল হিসেবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিকভাবে একে Cleome Hassleriana বলা হলেও ইংরেজিতে এটিকে Spider Flower বা Plant বলে। অনেকেই রাজমুকুট ফুল বলে, রিফিউজি লতা হিসেবেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে এবং দক্ষিণপূর্ব ব্রাজিলের স্থানীয় প্রজাতি।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom: Plantae.
Subkingdom: Tracheobionta.
Superdivision: Spermatophyta.
Division: Magnoliophyta.
Class: Magnoliopsida.
Subclass: Dilleniidae.
Order: Capparales.
Family: Capparaceae.
Genus: Cleome.
Species: Cleome gynandra.
এটি বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এদের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। হুরহুরে গাছের বিশেষ প্রজাতি হিসেবে চাষ হয়। তবে এর দৃষ্টিনন্দন ফুল থাকায় শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে চাষ হয়। যদিও বাংলার বাগানেতো বটেই বন জঙ্গলেও এ ফুলের দেখা মিলবে। বহু শাখাপ্রশাখায় বিস্তৃত ঝোপ আকৃতির গুল্ম জাতীয় গাছ। কাণ্ড সবুজ, শক্তপোক্ত, আঠালো এবং সুন্দর গন্ধযুক্ত। কাণ্ডের গায়ে কাঁটা থাকে।
পাতা একান্তর ভাবে সজ্জিত। পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক করতলাকারের মতো খণ্ডিত। প্রতি পত্রদন্ডে ৩ – ৭ টি পত্রক আঙুলের মত ছড়ানো থাকে। ২-১০ সেমি লম্বা ও ২-৪ সেমি চওড়া পত্রকগুলি ডিম্বাকার বা উপবৃত্তাকার। পত্র কিনারা খুব সুক্ষ ভাবে করাতের মত দাঁড়া যুক্ত বা ঢেউ খেলানো। পাতা সবুজ, গোলাপী, বেগুনি রঙের হতে পারে। কাণ্ড ও পাতা উভয়ই খাওয়া যায়।
ডালের আগায় লম্বা মঞ্জরিদণ্ডে ফুল ফোটে পর্যায়ক্রমে। একটি পুষ্পদন্ডে অসংখ্য সাদা রঙের ফুল ফোটে। সাদা ছাড়াও ফুলের অনেক রং হতে পারে হালকা বেগুনি, বেগুনি, গোলাপি প্রভৃতি। বোঁটা লম্বা, পাপড়ি খোলা, অসমান। এই ফুলের লম্বা বোটাগুলো দেখতে অনেকটা মাকড়সার পায়ের মত। সেকারনেই হয়ত এ গাছের আরেক নাম স্পাইডার ট্রি। বৃতি ৫-৮ মি.মি। পাপড়ি ৪ টি, পুংকেশর ৬ টি। প্রস্ফুটনকাল দীর্ঘ—শীতের প্রথম ভাগ থেকে বর্ষা-শরৎ পর্যন্ত। বীজ দূরবাহী ও বৈরী পরিবেশে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম।
ফল লম্বা ৩০-৪৫ মি.মি লম্বা ও ৩ মি.মি প্রশস্ত, রোমশ এবং মাকু আকৃতির। ফলের ভেতর ১.৫ মিমি আকারের কালো বা বাদামি গুগলি বা শামুকের মত দেখতে বীজ থাকে। মূলত বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। এক অর্থে এ প্রজাতি মরসুমিও বটে। এদের ভালব ও রাইজোম মাটির নিছে রয়ে যায় এবং তা গরমের ঋতুতে পুনরায় গাছে রূপান্তরিত হয়। প্রতি বছরই এমন করে নতুন গাছ গজায়। ফলে এর কন্দজ বিস্তারও সম্ভব।
হুরহুরে ফুল গাছ ঝোপালো উদ্ভিদ। ডালে অসংখ্য পাতা থাকলেও সেগুলো ছোট ও সবুজ। ফুলগুলো গোলাপি, বেগুনী ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে। ফুলের বীজ আকৃতি দেখতে অনেকটা শামুকের খোলসের মত। এটি আকর্ষণী, দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। এটি বিভিন্ন রঙের ফুল মনোরম সৌন্দর্য তৈরি করে। দক্ষিণ আমেরিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্থানীয় তথাকথিত হুরহুরে ফুলটি ১৮০০ শতকের গোড়ার দিকে উত্তর আমেরিকার, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বাগানগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছিল। গাছগুলো ৪-৮ ইঞ্চি প্রশস্ত। মৌটুসি পাখি ফুলগুলোকে বেশি পছন্দ করে। গাছগুলো তাপ এবং খরা সহ্য করতে পারে।
ভেষজ গুণাবলী :
স্বাস্থ্যের জন্য কিন্তু হুরহুরে বেশ উপকারি বলা যায়। এ গাছের কচি কাণ্ড খেলে গরমে শীতলতা বোধ হয়, ক্লান্তি দূর করে। দূর হয় ক্লান্তি। এমনকি রক্তচাপও এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যায়। খিঁচুনি, কানের প্রদাহ, ফোড়া ও পোকামাকড়ের কামড় উপশমে পাতা ব্যাবহার করা হয়। গোল কৃমি প্রতিরোধে ভালো কাজ করে এর বীজ।
এই উদ্ভিদ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তাতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কীটনাশক এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাইরাল উপাদান। গাছগুলো তাপ এবং খরা সহ্য করতে পারে। টিকতে পারে উচ্চমাত্রার সালফার-ডাই-অক্সাইড বা ক্লোরিন এর উপস্থিতিতেও। শক্তিশালী শোষণ ক্ষমতা থাকায় এটি পরিবেশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার পাশাপাশি বায়ুকে পরিশোধন করে বাতাসকে নির্মল করে।
হুরহুরে ফুল কিন্তু কেবল মানুষের পছন্দ নয়। মৌটুসি পাখিও এগুলোকে বেশ পছন্দ করে। এরপর রাস্তার ধারে সাদা কিংবা বেগুনি রঙা এই ফুলের প্রাকৃতিক তোড়া দেখলে আপনার মন ফুরফুরে হবে নিশ্চয়ই।