গোলাপি ফুরুস সৌন্দর্যের দিক দিয়ে অনন্য । ফুরুস গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia indica. এটি Lythraceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে (crape myrtle) ক্রেপ মার্টল নামে পরিচিত। অনেকে এই ফুলকে চেরি ফুল বলে ভুল করেন। ফুলটি আসলে ফুরুশ ফুল বা ছোট জারুল।এর আদি নিবাস চীন।
সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি খুব অনন্য। প্রায় চার মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এরা শক্ত, ডালপালা ভরা পত্রমোচি গাছ।
কাণ্ড বাদামি মসৃণ। পাতার পত্রবিন্যাস একান্তর বা ঘূণির্ত তিনটি পাতা থাকে, ডিম্বাকার, ৩.৫-৬ সেমি লম্বা, মসৃণ। বর্ষায় ডালের আগায় ছোট ছোট ফুলের বড় বড় থোকা, নানা রঙের ফুল- সাদা, গোলাপী, লাল, বেগুনী। ফুল ৩ সেমি চওড়া , পাপড়ি ৬, কুঁকড়ানো।
কলম ও শিকড় থেকে গজানো চারার মাধ্যমে বংশবিস্তার। বসন্তে ছেটে দিলে নতুন ডালে প্রচুর ফুল ফোটে।
জারুল, ফুরুশ ও চেরি ফুলের পরিচয় এবং শনাক্তকরণ নিয়ে বৃক্ষপ্রেমীদের মাঝে রয়েছে নানা বিভ্রান্তি। একই পরিবার ভূক্ত জারুল, ফুরুশ, চেরি সহজে চিনতে পারবেন ফুলে নয়, পাতা ও বৃক্ষের আকার দেখে৷ সবচেয়ে সহজ পাতা দেখে৷ জারুলের পাতা বেশ বড় আকারের, কিছুটা কদম কিংবা আতার পাতার মতো, গাছ ও ফুল বড় ৷ ফুরুশ এর পাতা মাঝারি, অনেকটা বাউকুলের পাতা আকৃতির। গাছ ও ফুল মাঝারি সাইজের। চেরির পাতা অনেকটা আপেল কুল বা বরই পাতার মতো ছোট ছোট৷ ফুল ও গাছও ছোট আকৃতির৷
দ্রুত বর্ধনশীল ফুরুশ আদ্রতা যুক্ত মাটি এবং সূর্যালোকে ভালো জন্মে। কোন অঞ্চলে একবার অভিযোজিত হয়ে গেলে, খরা সহনশীলও হয়ে উঠে। ফুরুশের আকর্ষণীয় ও বৈচিত্র্যময় বর্ণের কারণে এর বিভিন্ন উচ্চতার, অধিক রোগপ্রতিরোধী ও অধিক পাঁপড়ি সমৃদ্ধ সঙ্কর প্রজাতির বিস্তৃতি এখন সর্বত্র। তন্মধ্যে Cherokee, Tuskegee, Miami, Seminole, Tuscarora, Potomac, Tonto ইত্যাদি অধিক বৈশিষ্ঠ্যসম্পন্ন ফুরুশের প্রজাতিগুলি উল্লেখযোগ্য।
ঔষধি ব্যবহার :
১। ফুরুস ফুল থেঁতো করে হালকা গরম পানির সাথে খেলে পেটের ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়।
২। ফুরুস গাছের বাকল পানিতে সিদ্ধ করে সকাল বিকেল সেবন করলে আমাশয় দ্রুত ভালো হয়।
৩। ফুরুস পাতা ও ফুল একসাথে বেটে হাতে-পায়ে লাগালে হাত ও পায়ের জ্বালা কমে যায়।
৪। কুষ্ঠরোগ দেখা দিলে ফুরুস এর মূল থেঁতো করে ক্ষতে লাগালে ক্ষত দ্রুত ভালো হয়।