স্থলপদ্ম হল মালভেসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি একটি মাঝারি আকারের ঝোপালো গুল্ম। বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus mutabilis. এর স্থানীয় বাংলা কোনো নাম নেই। ইংরেজি নাম Dixie rose mallow, Changeable Rose, Chinese Rose, Confederate Rose, Cotton rose, Evening-rose তবে আমাদের দেশে স্থলপদ্ম বা স্থল কমল নামে ডাকা হয়। হিন্দি নাম স্থলকমল, শলগড়, গুলিয়াজেব এবং সংস্কৃত নাম পদ্মচারিণী।
এ দেশে মোটামুটি পরিচিত হলেও স্থলপদ্মের আদি বাসস্থান চীন। চীন এবং সংলগ্ন দেশগুলোর স্থানীয় গাছ হলেও বর্তমানে এটি অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশে পাওয়া যায়। নামের সঙ্গে পদ্ম শব্দটি যুক্ত থাকলেও এ ফুল কিন্তু পানিতে হয় না। রীতিমতো ডাঙার বড় গাছ। দেখতেও ভারি সুন্দর। রং বদলানোর অভ্যাস আছে বলেই ইংরেজি নাম চেঞ্জেবল রোজ। কারণ তাজা আর বাসি ফুলের রং আলাদা।
ফুল ফোটার মৌসুম শরৎ-হেমন্ত। পদ্ম আর স্থলপদ্ম পুরোপুরি আলাদা গোত্রের উদ্ভিদ। স্থলপদ্ম মাঝারি ধরনের ঝোপালো গুল্ম। সাধারণত তিন-চার মিটারের মতো উঁচু হয় এর গাছ। পাতাগুলো অনেকটা ঢ্যাঁড়সপাতার মতো এবং ঢ্যাঁড়সপাতার চেয়ে নরম। কাণ্ড খসখসে, রোমশ। পাতাগুলো বড় বড়, কিনারে থাকে কয়েকটি খাঁজ। বোঁটা বেশ লম্বা। ঢেঁড়শ এবং স্থলপদ্ম একই গণের উদ্ভিদ। বছরে একবার পাতা ঝরায়। সাধারণত ৩ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
ফুলের গঠন জবার মতো কিন্তু অপেক্ষাকৃত বড়। ফুল বড়, ৪ থেকে ১০ সেন্টিমিটার চওড়া। সাধারণত অনেকগুলো পাপড়ি থাকে। ফুলের রং গোলাপি দেখতে দুধে-আলতা মেশানো রঙের মতো। কোথাও কোথাও পাঁচ পাপড়ির সিঙ্গেল ফুলও দেখা যায়। হালকা সুগন্ধি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোলাপি রঙের এ ফুলগুলো লালচে রঙের হতে শুরু করে। ফুল ফোটে শরৎকাল থেকে শীতের প্রথমভাগ পর্যন্ত। অন্যান্য সময়ে দু’একটি ফোটে।
কাটিং মাধ্যমে স্থলপদ্মের বংশবিস্তার সবচেয়ে সহজ। কাটিং প্রায় যেকোনো সময়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে বীজের মাধ্যমেও খুব সহজে বংশ বিস্তার করা যায় এ ফুলের। তবে বীজের গাছে ফুল আসতে অনেক বেশি সময় লাগে, যেখানে কাটিং করা গাছে এক বছরেই ফুল ফোটে। এটি বাগানের পাশাপাশি টবেও রোপণ করা সম্ভব। তবে এর জন্য একটু বড় আকারের টব দরকার। টবের ক্ষেত্রে বীজের চেয়ে কাটিং ব্যবহার করাই উত্তম।তাতে দ্রুত ফুল আসবে। শীতকালে গাছের ডাল ছেঁটে দেওয়া ভালো।
স্থলপদ্মের ভেষজ গুণ
কোমরে যন্ত্রণা হলে স্থলপদ্মগাছের শিকড়ের ছাল বেটে রস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ফুলের রস চিনিসহ দিনে ২ থেকে ৩ বার করে ৩ থেকে ৪ দিন খেলে প্রস্রাবের বেগ ভালো থাকে।
মেয়েদের কোমরে ও তলপেটে যন্ত্রণা হলে স্থলপদ্মগাছের শিকড়ের ছাল বেটে শরবত করে ঋতুস্রাব হওয়ার ৭-৮ দিন আগে থেকে ২-৩ মাস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
প্রমেহ রোগের চিকিৎসায় ৫০০ মিলিগ্রাম পরিমাণে স্থলপদ্মগাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন একবার করে পান করতে হবে এক সপ্তাহ। এতে বিশেষ উপকার না হলে একই পরিমাণ পাতা বেটে এর রস খেতে হবে এক সপ্তাহ।