মতিয়া বেলি ফুলের সাদা রঙের তীব্র সুগন্ধযুক্ত ফুল। এর মিষ্টি ঘ্রাণ পুষ্পপ্রেমিদের হূদয় ছুঁয়ে যায়। মালা গাঁথার বিশেষ উপযোগী এই ফুলটি আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত। ধবধবে সাদা বেলির আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। বৈজ্ঞানিক নাম Jasminum sambac।
গুল্ম জাতীয় এই গাছের উচ্চতা এক মিটারের মতো। অনেকটা ঝোপালো গড়নের। কাণ্ড সরু, পাতা ৪-৮ সেন্টিমিটার লম্ব্বা, গাঢ় উজ্জ্বল সবুজ মসৃণ। পাতার মধ্যে ছোট ছোট অসংখ্য ফুল থোকায় থোকায় ফুটে বেরোয়। ফুলের পাপড়ি সুবিন্যস্ত।এই প্রজাতির গাছের উচ্চতা এক মিটার হতে পারে। গ্রীষ্ম ও বর্ষায় একটি থোকায় কয়েকটি ফুল ফোটে। কলম ও শিকড় থেকে গজান চারায় চাষ করা যায়। শীতকালে ছেঁটে দেয়া লাগে এবং টবেও ভালোভাবে জন্মান যায়।
সাধারণত ফাল্গুন থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত সময়ে এই ফুল ফোটে। তবে বর্ষা মৌসুমেও কমবেশি ফুটতে দেখা যায়। গোধূলিলগ্নে এ ফুল ফোটে এবং পরদিন দুপুরেই ঝরে যায়। মাঝের সময়টুকু মিষ্টি ঘ্রাণে চারপাশ ভরিয়ে রাখে।
ফুলের আকার ও গড়ন অনুসারে বেশ কয়েকটি জাত আছে। সাধারণত যে ৪ শ্রেণীর বেলীর সঙ্গে আমরা পরিচিতঃ
১. রাই বেলীঃ এ জাতের বেলী দেড় থেকে দু’হাত লম্বা হয়। পাঁপড়ি সুসজ্জিত, গোলাপের মতো ও গন্ধ খুব উগ্র।
২. খয়ে বেলীঃ ছোট গাছ। ফুল ফোটে অজস্র। তীব্র সুগন্ধিযুক্ত। মালা তৈরিতে এর ব্যবহার ব্যাপক।
৩. মতিয়া বেলীঃ এ জাতের বেলী ফুলের অসংখ্য পাঁপড়ি এবং থোকায় থোকায় ফুল ধরে। ফুল মনোরম গন্ধযুক্ত।
৪. ভরিয়া বেলীঃ এ জাতের বেলীকে বলা হয় রাজা বেলী। ফুলের ওজন ১ ভরি। গড়ন ও গন্ধ মনোমুগ্ধকর। সাদা রঙের তীব্র সুগন্ধযুক্ত মালা গাঁথার বিশেষ উপযোগী।
বেলী ফুলের গাছে সাধারণত ফলের দেখা মেলে না। তবে ফল যে একেবারেই দেখা যায় না তেমন নয়। ফল খুবই ছোট, ১ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট, গোলাকার, বেগুনী বা কালো রঙের হয়ে থাকে। ফলে বীজের সংখ্যা ১-২ টি, রঙ কালো, গোলাকার। বীজের এই দুস্প্রাপ্যতার কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেলী কলম ও শিকড় থেকে গজান চারায় চাষ করা হয়।
ঔষধি গুণাবলী
সাজসজ্জা বা সুগন্ধী হিসেবে বেলীর ব্যপক ব্যবহারের সাথে সাথে নানান রোগের চিকিৎসাতেও এর যথেষ্ট কদর রয়েছে। বেলীর সুগন্ধ স্নায়ুচাপ কমিয়ে ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে। বেলীর ফুল জন্ডিস রোগে এবং যৌন রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। ফুলের কুঁড়ি আলসার, ফোড়া, চর্মরোগ এবং চোখের অসুখে কাজে লাগে। পাতার রস ব্রেস্ট টিউমারে ও পাতার কাত্থ জীবাণুনাশক হিসেবে ক্ষত ও ফোড়ায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বেলী ফুলের চা পাচন সহায়ক হিসেবে, জ্বর সারাতে, ও মুত্রনালীর সংক্রমন নিরাময়ে কাজ করে।
তবে বেলীর সমস্ত ভেষজগুণ কে দূরে সরিয়ে রাখলেও শুধুমাত্র সাজার জন্যই হোক কিংবা মাতাল করা গন্ধের কারণেই, বেলি ফুল প্রিয় সবারই। হাজারো আধুনিক সৌন্দর্যের মধ্যে এটি আজও অনন্য।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom : Plantae
Subkingdom : Viridiplantae
Infrakingdom : Streptophyta
Superdivision : Embryophyta
Division : Tracheophyta
Subdivision : Spermatophytina
Class : Magnoliopsida
Superorder : Asteranae
Order : Lamiales
Family : Oleaceae
Genus : Jasminum
Species : Jasminum sambac