মস রোজ অথবা পর্তুলিকা, টাইম ফুল, ঘাস ফুল, নয়টার ফুল অনেক নামেই এই ফুল পরিচিত।
এই ফুল প্রতিদিন বিশেষ একটি সময়ে ফোটে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঝিমিয়ে যায়। এর প্রস্ফুটন সময় সকাল ৮টা থেকে ৯টা এবং ঝিমিয়ে যায় দুপর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। তাছাড়া স্থানভেদে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত।
যেমন পর্তুলিকা, মসরোজ, টায়রা, জায়েন্ট, ঘাসফুল, টাইম ফুল, এগারটার ফুল,মেক্সিকান রোজ, ভিয়েতনামের রোজ, সান রোজ, পাথর গোলাপ, মস রোজ পার্সলে, গুল দোপেহেরি, ফুলকুমারি, পিলো প্ল্যান্ট, নয়টার ফুল, দশটার ফুল, অফিস ফুল, হুক ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত এই সুন্দরী।
তবে আমাদের দেশে ‘টাইম ফুল’ নামে ফুলটি বেশি পরিচিত। নির্দিষ্ট সময়ে ফোটার কারণে এই নামকরণ। আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Portulaca grandiflora।
প্রতিদিন সকাল বেলায় একই সময়ে ফুল ফোটে বলে এক টাইম ফুল বলে। দেখতে খুব সুন্দরী এই পর্তুলিকা চিকন চিকন পাতায় ঘেরা,মাঝখানে ছোট্ট ফুলটি ফুটে থাকে।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। নানান রঙের পাপড়িতে বেষ্টিত এই পর্তুলিকা। পাপড়িগুলো খুবই পাতলা।
বর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ। গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। লতা গঠনে গোলাকার, লালচে বা সাদাটে ও মসৃণ। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল।
কোনো স্থানে দু-চারটি লতা কাটিং রোপণ করলে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে অসংখ্য গাছ জন্ম নেয় এবং গাছের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
শীতকালে এই গাছ দুর্বল থাকে এবং বসন্ত থেকে হেমন্ত ঋতু পর্যন্ত গাছ থাকে বেশ সজীব।
গাছের ক্ষুদ্রাকৃতির পাতা লম্বাটে থেকে নলাকার ও পুরু। সরাসরি মাটি ও টবে রোপণ উপযোগী ফুলগাছ। এই ফুলগাছের জন্য বেলে থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি উত্তম। তাছাড়া রৌদ্রোজ্জ্বল উঁচু ভূমি প্রয়োজন এবং পানি নিকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভেজা মাটি ও পানি সহ্য করতে পারে না।
সিঙ্গল ও ডাবলসহ রং বাহারি ফুল। যেমন সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা, বেগুনি, মেজেন্টা।
তবে আমাদের দেশে সাদা, গোলাপি ও বেগুনি রঙের ফুল বেশি ফোটে। ফুল শীতকাল বাদে প্রায় সারা বছরই ফোটে। তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরত্ কাল এই ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম।
এ সময়ে গাছে প্রচুর ফুল ফোটে। ফুল গন্ধহীন। এর ডাবল ফুলের পাপড়ি বিন্যাস ও গঠন প্রায় গোলাপের মতো, তবে আকারে ছোট। ফুলে নমনীয় কোমল অসংখ্য পাপড়ি থাকে এবং মাঝে পরাগ অবস্থিত।
রং বাহারি ফুল হিসেবে এর রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। তাই তো আমাদের দেশে বাসাবাড়ির বাগান, ছাদবাগান, পার্ক ও উদ্যানে এই ফুল চোখে পড়ে।
চাষ পদ্ধতি:
এর চাষ পদ্ধতিও অনেক সহজ। মোটামুটি অল্প কিছু নিয়ম মেনে চললেই এর সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব। প্রথমত, মাটির মিশ্রণটা হওয়া চাই ঝুরঝুরে। এজন্য মাটি মিশ্রনের অনুপাত হবে মাটি ৪০% বালি ৩০% জৈবসার/গোবর সার ৩০%। কিছু কম বেশি হলেও সমস্যা নাই।
দ্বিতীয়ত,কাটিং এক /দেড় ইঞ্চি পরিমান টুকরো করে লাগাতে হবে।
এর জন্য গভীর পাত্র দরকার হয় না ৪/৬ ইঞ্চি গভীর ছড়ানো পাত্র আদর্শ।
তৃতীয়ত, কাটিং লাগানোর পর ২/৩ দিন ছায়ায় রাখতে হবে। এই সময়েই শিকড় বের হয়ে যাবে এর পর টানা রোদ।
রোদ ছাড়া এর সৌন্দর্য কোনোভাবেই দেখা যাবে না।বড় আকারের বেশি ফুল পেতে মাসে দুইবার খইল ভিজানো পানি ১০ গুন পানির সাথে মিশিয়ে পাতলা করে গাছে দিতে হবে।
জাত : গ্রেন্ডিফ্লোরা।
রঙ : সাদা, হলুদ, অফ হোয়াইট, হালকা গোলাপি, মিষ্টি, কমলা, টকটকে লাল, গাঢ় বেগুনি, গোলাপি, মিক্সড রং সহ প্রায় ১৩/১৪ জাতের পর্তুলিকা রয়েছে। বপন : মার্চ – অগাস্ট
উপসংহার:
মস রোজ অথবা পর্তুলিকা ফুল উভয়ই যে কোনো বাগান বা ফুলের বিন্যাসে অনন্য সৌন্দর্য এবং সুবিধা প্রদান করে। মস রোজ ও টাইম ফুল উজ্জ্বল ফুল যা আপনাকে মোহিত করে, যখন তার প্রাণবন্ত রঙ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উন্নতি করার ক্ষমতা দ্বারা মুগ্ধ করে।
আপনি এমন একটি ফুলের সন্ধান করছেন যা কমনীয়তা প্রকাশ করে বা এমন একটি যা কঠোরতম পরিবেশ সহ্য করতে পারে, এই দুটি গাছ আপনাকে আচ্ছাদিত করেছে। তাহলে কেন এই মরসুমে আপনার বাগানে কিছু মস রোজ অথবা পর্তুলিকা যোগ করার কথা বিবেচনা করবেন না? তাদের সৌন্দর্য এবং স্থিতিস্থাপকতা অবশ্যই আপনাকে আনন্দিত করবে।
মস রোজ অথবা পর্তুলিকা ফুলের সৌন্দর্য :-
নিজে যতটুকু করি সেটাই তুলে ধরলাম।কেও সুচিন্তিত মতামত দিলে সাদরে গ্রহণ করা হবে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটা কলাম লেখার জন্য। পরতুলিকা আমার অনেক প্রিয় একটি ফুল।